হুগলি,২৬ ডিসেম্বর:- মায়েরা বোধহয় এমনই হয়।নিজের দিন গুজরান হয় চেয়েচিন্তে। ছেলের চিকিৎসার জন্য লোকের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন আবার নিজের বার্ধক্য ভাতার টাকাও ছেলের চিকিৎসায় খরচ করছেন।এক সুভাষিণী মিস্ত্রি হাসপাতাল গড়েছেন দুস্থদের চিকিৎসায়। আর চুঁচুড়ার সুভাষিণী চ্যাটার্জী ছেলের চিকিৎসার খরচ যোগার করতে নিজের সর্বস্ব উজার করে দিচ্ছেন। ভালো করে হাঁটে পারেন না, ৯৬ বছর বয়সে অশীতিপর বৃদ্ধার একটাই চিন্তা ছেলের চিকিৎসা চলবে কি করে। দেশ ভাগের সময় ওপার বাংলাতেই ছিলেন। ৬৪ সালে বাংলাদেশের সাতক্ষিরা থেকে হুগলিতে চলে আসেন স্বামী সন্তানদের নিয়ে। কিছুদিন রিফিউজি ক্যাম্পে থাকার পর চুঁচুড়া কাপাসডাঙায় বসবাস শুরু করেন।বছর কুড়ি আগে স্বামী মহেন্দ্রনাথের মৃত্যু হয়।
ততদিনে তিন ছেলে আলাদা সংসার করেছে। মা নিজেরটা নিজেই চালিয়ে নেন,ছেলেরাও দীন মজুর তাই তাঁরা খুব একটা খোঁজ নেয় না মায়ের। মেজো ছেলে অনিলের গলায় ক্যান্সার ধরা পরে বছর খানেক আগে।স্থানীয় ভাবে চিকিৎসা করে সে। মাস তিনেক আগে দিল্লী অল ইন্ডিয়া ইন্সটিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্স(AIIMS) এ ভর্তি হয়। দিল্লীতে সুভাষিণী দেবীর মেয়ে পরিচারিকার কাজ করে। সেই বছর সাতষট্টির অনিলের ভর্তির ব্যাবস্থা করে।কিন্তু চিকিৎসার খরচ চলবে কি করে।অশক্ত শরীরে ছেলের চিকিৎসার খরচ যোগাতে বেরিয়ে পরেন বৃদ্ধা সুভাষিণী চ্যাটার্জী।লোকের কাছে যা পান দুই তিন হাজার টাকা জমা করে মেয়ের কাছে পাঠিয়ে দেন।নিজের বার্ধক্য ভাতার টাকাও দিয়ে দেন ছেলের জন্য।এই বয়সে যা জোটে তাই দুটো ফুটিয়ে নেন। গত দুদিন কিছুই খাননি।ছেলের জন্য বড্ড ভাবনা তাঁর।তাই সকাল থেকে ঘুরছেন। এভাবেই চুঁচুড়ার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার অফিসে পৌঁছে যান। যদি কোনো সাহায্য পাওয়া যায়। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সদস্য ইন্দ্রজিৎ দত্ত জানান তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী সাহায্য করেছেন। কিন্তু বৃদ্ধার ছেলের চিকিৎসার জন্য তা যতসামান্য।অনেকে সাহায্য করলে বৃদ্ধার প্রয়োজন মিটবে। দিদিকে বলোতেও ফোন করে তাঁর অবস্থার কথা জানিয়েছেন বৃদ্ধা। হাঁড় কাঁপুনি ঠান্ডায় জবুথবু অবস্থা।সেসব ভাবনা নেই সুভাষিণী চ্যাটার্জীর। ছেলেটা আবার কথা বলতে পারবে তো,ছেলেটা বাড়ি ফিরবে তো,ভেবেই চোখের কোন ভিজে ওঠে তাঁর।