সুদীপ দাস, ১৫ ডিসেম্বর:- সন্তোষী মাতার সামনে শ্রীকৃষ্ণের অষ্টনাম জপ। বেজায় চটে শক্তি রূপীনি দেবী। তলোয়ার হাতে কৃষ্ণ ভক্তের ঘাড় ধরে প্রায় চার কিমি পারি দিয়ে সটান থানায় নিয়ে এলেন দেবী মা।ঘটনায় হতচকিত সকলে। পরে সুদামাকে ছাড়াতে থানায় খোল করতাল নিয়ে থানায় উপস্থিত শ্রী কৃষ্ণের ভক্তকুল। খাকি বর্দিতে থাকা কলি যুগের রক্ষকরা কিন্তু ভোলেভালা সুদামার পক্ষেই সওয়াল করলেন। হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন কৃষ্ণপ্রেমী। তবে হাল ছাড়তে নারাজ সন্তোষী মাতা। সিপি থেকে ডিএম অফিস সর্বত্র ছুটলেন তিনি। যদিও কোথাও সাথ না মেলায় মায়ের হাত ধরে গোমড়া মুখে ঘরে ফিরলেন দেবী মা। ঘোর কলি যুগে কৃষ্ণভক্ত খুঁজে পাওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। তবে সেই ভক্তের কপালে সন্তোষী মায়ের ক্রোধ! এটা কি করে সম্ভব। হ্যাঁ ভগবান যীশুর জন্মমাসে ৩য় বুধবার দুপুরে ঘটনাটি ঘটেছে হুগলীর চুঁচুড়া থানার ব্যান্ডেল চার্চ সংলগ্ন এলাকায়। এদিন দুপুর ১২টা নাগাদ হঠাৎ করেই এক মহিলা কপালে চন্দনের তিলক টানা ধুতি-পাঞ্জাবি পরিহিত এক ব্যাক্তির ঘার ধরে রীতিমত টানতে টানতে থানায় প্রবেশ করেন। সেসময় থানার সামনে উপস্থিত পথচলতি মানুষ থেকে শুরু করে পুলিশ কর্মীরা সবাই হতবাক। কিছুক্ষনের মধ্যেই থানার সামনে খোল-করতাল নিয়ে চলে আসেন জনা কয়েক ব্যাক্তি। শুরু হয় টানটান উত্তেজনার পর্ব।
মিনিট ১৫পর থানার ভিতর থেকে মহিলা পুলিশ কর্মীরা বের করে দেন ওই মহিলাকে। মহিলার মা এসে তাঁকে নিয়ে যেতে উদ্যত হন। তখনও গজগজ করছেন রণচন্ডী ওই মহিলা। থানার আধিকারিকের নাম ধরে রীতিমত দেখে নেওয়ার হুমকি। বলতে থাকেন আমি এক্ষুনি পুলিশ কমিশনারকে আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে যাচ্ছি। অভিযুক্ত মহিলার মা তখন মেয়েকে বুঝানোর আপ্রান চেষ্টা করতে করতে থানা থেকে বের করে নিয়ে যাচ্ছেন। পরে কথামত প্রথমে সিপি অফিসে পৌঁছন মহিলা। মেয়ের জেদের কাছে হার মেনে পিছু নেন মাও। তবে ততক্ষনে থানা থেকে সিপি অফিসে খবর পৌঁছে গেছে। সেখানেও মহিলা পুলিশ কর্মীদের সাথে বেশকিছুক্ষন কসরৎ করে হার মানেন মহিলা। এরপর মাকে নিয়ে সোজা হুগলীর জেলাশাসক দপ্তরে। কিন্তু সেখানেও প্রবেশে বাঁধা। সূত্রের খবর পরে গোমরা মুখেই মায়ের সাথে বাড়ি ফিরতে হয় মহিলাকে। তবে এদিন ঠিক কি হয়েছিলো? পুলিশ সূত্রে খবর এদিন মেদিনীপুর থেকে কয়েকজন কীর্তনীয়া নাম সংকীর্তন করতে করতে উপস্থিত হন ব্যান্ডেল চার্চ লাগোয়া এলাকায়। সেখানেই মানসিক অবসাদগ্রস্থ ওই মহিলার বাড়িতে গিয়ে নাম-সংকীর্তন শুরু করেন তাঁরা। মানসিক অবসাদগ্রস্থ তাই নাম দেওয়া ঠিক হবে না। তবে বাংলা অভিধান অনুযায়ী মহিলার নামের অর্থ সন্তোষী মাতা।
কীর্তনীয়া দলের আশা ছিলো ওই ঘর থেকে হয়তো খাদ্যসামগ্রী কিংবা আর্থিক সহায়তা মিলবে। কিন্তু তার বদলে রণচন্ডীরূপী সন্তোষী মাতা ভ্যানিটি ব্যাগ কাঁধে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসেন। কীর্তনীয়া দলের অন্যতম সদস্য শঙ্কর ডোগরার মুখে তখন কৃষ্ণ জপ চলছে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই শঙ্করের উপর চড়াও হন দেবী মা। শুরু হয় উত্তম-মধ্যম। এরপর ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে দেবী সন্তোষী একটি ছুঁরি বের করেই শঙ্করের গলায় তাঁক করেন। সঙ্গে সঙ্গে এই মরি সেই মরি করে শঙ্করের বন্ধুরা খোল-করতাল নিয়েই দে ছুট। মাতাজি তখন একহাতে শঙ্করের ঘাড় ধরে অন্যদিকে গলায় ছুঁরি তাঁক করে রাস্তায় বের হন। পরিস্থিতি দেখে সন্তোষী মায়ের এক ইশারাতেই একটি টোটোও দাঁড়িয়ে যায়। সেই টোটোতে চাপিয়েই শঙ্করবাবুকে সোজা থানায় নিয়ে আসেন দেবী মা। পুলিশকে অভিযোগ করেন নাম সংকীর্নের নামে টাকা-পয়সা চুরি করাই শঙ্করের ধর্ম। তবে এটা নতুন নয়, এর আগেও এক টোটোচালককে ঠিক এভাবেই থানায় ধরে নিয়ে এসেছিলেন ওই মহিলা। পুলিশ তখন খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ওই মহিলা মানসিক অবসাদগ্রস্ত। কয়েকজন পুলিশ কর্মী চিনতে পেরে বুঝতে পারেন আবারও সন্তোষী মা কারোর প্রতি রুষ্ট হয়েছেন। নিয়ম মেনে দেবী মার হাত থেকে শঙ্করবাবাজিকে রক্ষা করার দায় পরে দেবীপক্ষের হাতেই। মহিলা পুলিশ কর্মীরাই সন্তোষী মাকে বলপূর্বক থানা থেকে বের করে দেন। ততক্ষনে থানার সামনে রুষ্ট মায়ের আপন জননী শঙ্করের সহয়োগীদের নিয়ে থানার সামনে চলে আসেন। মেয়েকে ঠান্ডা করতে করতে বেড়িয়ে পরেন মা। হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন শ্বেতবস্ত্রধারী শঙ্করের দল। তবে এদিন ঘটনার বিবরন লিখিত আকারে থানায় জমা দিয়ে যান তাঁরা। ঘন্টা দুয়েকের রোমহর্ষক পর্বের পর কোনক্রমে প্রান ফিরে পেয়ে কীর্তনিয়াদের খোল-করতালে তখন খুশির প্রতিদ্ধনী। প্রান ফিরে পেয়ে তখন শ্রী কৃষ্ণের জপে যেন আরও উৎসাহ, চলনে আরও উদ্দীপনা!!