এই মুহূর্তে জেলা

ভারাটে খুনি,আগ্নেয়াস্ত্র চালাতে পারেনা, তাই কাটারি দিয়ে খুন!

হুগলি, ৩ আগস্ট:- বারসাতের হোটেল থেকে ধরা পরে পুলিশকে প্রশ্ন কি করে খোঁজ পেলেন। ষাট ঘন্টার পর তৃনমূল নেতা খুনে গ্রেফতার তিন অভিযুক্ত। গত বুধবার সন্ধায় কানাইপুর অটো স্যান্ডের কাছে নিজের গ্যাসের অফিসের সামনে নৃশংস ভাবে কুপিয়ে খুন হন কানাইপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃনমূল সদস্য পিন্টু চক্রবর্তী। ঘটনার সময়কার সিসিটিভি ফুটেজ রীতিমতো হার হিম করার মত। তৃনমূল নেতাকে কাটারি দিয়ে কুপিয়ে মারা হয়। প্রথম কোপে মাটিতে পরে যেতেই সেখানেও কোপাতে থাকে আততায়ী। হাত দিয়ে আটকানোর চেষ্টা করলে ডান হাতের কব্জি থেকে কেটে পরে যায়। বেশ কয়েকবার কাটারির কোপ মারার পর আততায়ী দুজন দৌড়ে পালায় এলাকা থেকে। কিছু দূরে বিশ্বনাথ দাস ওরফে বিশা অপেক্ষা করছিল স্কুটার নিয়ে। তাদের কোন্নগর রেল স্টেশনে ছেড়ে দিয়ে আসে। সেখান থেকে ট্রেন ধরে বিশ্বজিৎ প্রামানিক ও দীপক মন্ডল বারাসাতে চলে যায়। তদন্তে নামে চন্দননগরের ডিডি এসবি পুলিশের বিশেষ দল। প্রথমে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে আততায়ীদের চিহ্নিত করে। তবে পুলিশের তালিকায় থাকা দুষ্কৃতিদের সঙ্গে তাদের মিল পাওয়া যায়না।

একাধিক সিসিটিভি ফুটেজে পুলিশ দেখে একজন আততায়ী মোবাইলে ঘনঘন কথা বলছে। এলাকার সেই সময়কার রিয়েল টাইম লোকেশান ট্রাক করা শুরু করে পুলিশ। একটি নির্দিষ্ট নন্বর সুইচড অফ দেখাতে থাকে। সেই নম্বর ট্রাক করে পুলিশ বিশ্বজিতের খোঁজ পায়। স্থানীয় সূত্রকে কাজে লাগিয়ে বিশ্বনাথকে তুলে নেয়। এরপর বারাসাতে রেড করে একটি হোটেল থেকে বিশ্বজিৎ কে গ্রেফতার করে। সেসময় বিশ্বজিৎ এক যুবতীর সঙ্গে সেই হোটেলে ছিলো। বিশ্বজিতের বাড়ি শাসনে। দীপককে তার বারাসাতের বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। দুজনের কাছ থেকে সুপারীর তিন লাখ টাকার অধিকাংশ উদ্ধার করে পুলিশ। দুজনকে গ্রেফতারের আততায়ীরা অবাক হয়ে যায় তাদের খোঁজ কি করে পেলো পুলিশ! ডিসিপি শ্রীরামপুর অর্নব বিশ্বাস বলেন, বিশ্বনাথ দুজন ভাড়াটে খুনিকে তিন লক্ষ টাকা দিয়েছিল পিন্টুকে খুন করার জন্য। সেই টাকা নিয়ে ভীন রাজ্যে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিল তারা। তার আগেই পুলিশ তাদের ধরে ফেলে। ডিসিপি আরো জানান, জমি সংক্রান্ত বিবাদের জেরে এই খুন বলে প্রথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। যে আততায়ীদের সুপারী দিয়েছিল সেই বিশা কামাইপুরের এক সময়ের কুখ্যাত দুষ্কৃতি ভোলানাথ দাস ওরফে বাঘার ভাই।

বাঘা বনাম হুব্বা শ্যামলের লড়াই হুগলির কোন্নগর কানাইপুর অঞ্চলে এক সময় ত্রাসের সঞ্চার করত। হুব্বা ২০১১ সালে মারা যাওয়ার আগেই বাঘা এলাকা ছাড়ে। তবে তার ভাই কানাইপুরেই থাকে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কানাইপুর এলাকার জমি কেনাবেচা করতে গেলে পিন্টুকে এড়িয়ে করা যেত না। হিন্দমোটরের বহুতল আবাসন প্রকল্প তৈরী হচ্ছে। লাগোয়া কানাইপুরে জমির দাম হুহু করে বাড়ছে। কলোনী এলাকার জমি ওই আবাসন প্রকল্পের পাশেই তাই চাহিদাও বেশি। কাছেই ফোর লেনেই দিল্লী রোড। পিন্টুর গ্যাসের ব্যবসার পাশাপাশি অন্যান্য কারবারও ছিল। তবে তার রাজনৈতিক সহকর্মি থেকে বন্ধুরা বলছে, পিন্টু এভাবে খুন করার পিছনে জমির বিষয় থেকে থাকে তাহলে এই নৃশংসতার কারন ভয় ধরানো। এলাকায় ভয়ের পরিবেশ তৈরী করা। সুপারী নিয়ে কাউকে খুন করলে বন্দুক পিস্তল থেকে গুলি ছুঁড়ে খুন করতে পারে ভাড়াটে খুনিরা। কানাইপুরে খুনে ভাড়াটে খুনিরা আগ্নেয়াস্ত্র চালাতে পটু নয় তাই কাটারি দিয়েই কাজ হাসিল করে। তাই পোড় খাওয়া পুলিশ অফিসারাও তদন্তে অবাক হয়েছিলেন। ডিসিপি জানান, সুপারী দিয়ে দু দিন নিজের কাছে রেখেছিলেন বিশ্বনাথ। কাজ শেষ করে তাদের পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করেছিলেন। তৃনমূল নেতা খুনে আরো কেউ যুক্ত থাকার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছ না পুলিশ। ধৃতদের আজ আদালতে পেশ করে রিমান্ডে নেবে।