হুগলি, ১৮ মে:- আরামবাগের গোঘাটে তৃণমূল প্রার্থী মিতালী বাগের সমর্থনে এক বিশাল জনসভা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।এদিন সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আরামবাগের এই অঞ্চলে প্রচুর মন্দির আছে। আর আছে টেরাকোটা। তাই পর্যটনের জন্য অনেক কিছু করা হয়েছে। আরও হচ্ছে। পর্যটন বাড়লে আরও উন্নতি হবে। ৮৯০ কোটি টাকার প্রকল্প উদ্বোধন করে গিয়েছি। নতুন রাস্তার প্রকল্পে উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গ জুড়বে। তাতে পর্যটনের নতুন ক্ষেত্র খুলে যাবে। আরামবাগের রাস্তা এবং অন্য সংস্কারের কাজ হয়ে গেলে কামারপুকুর এবং জয়রামবাটিও উন্নত হবে। পর্যটন বাড়বে। বললেন মমতা। মন্দির পর্যটন বাড়বে। বললেন মমতা। তীর্থ পর্যটন প্রসঙ্গে টেনে আনলেন দিঘার জগন্নাথ মন্দিরের প্রসঙ্গও। বললেন, ‘‘অনেক কাজ করেছি। ’’ কামারপুকুর-জয়রামবাটিতে তাঁর আসার ইতিহাস আশ্চর্যের ঘটনা, জানালেন মমতা। বললেন, আরামবাগ থেকে একটা রাস্তা আছে গরবেতা আর চমকাইতলা পর্যন্ত। ওখানে একটা সুড়ঙ্গ করেছিল সিপিএম। মেরে সুড়ঙ্গ দিয়ে ভাাসিয়ে দিত জলে। আমি চমকাইতলায় পার্টির মিটিং করতে এসেছিলাম। আমার সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজিত পাঁজা ছিলেন। আমি তখন রেলমন্ত্রী। আমাদের প্যান্ডেল, বাস ভেঙে দেওয়া হল। অজিত পাঁজাকে আমি ছুটে এসে উদ্ধার করে নিয়ে যাই। শুধু গুলি চলছিল। আমার সেদিন থাকার জায়গা ছিল না। জয়রামবাটি-কামারপুকুর থেকে বলে দিয়েছিল কোথায় থাকতে হবে। আমি সেদিনের জন্য কৃতজ্ঞ। পুরনো স্মৃতি নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই গোঘাটের পাশে বাঁকুড়া।
এখানে আমরা এসেছিলাম। সিপিএম গ্রাম দখল করে নিয়েছিল। মেরে লাশ ভাসিয়ে দিয়েছিল। রাত ১টার সময় বেরিয়েছিলাম। গা ছম ছম করছিল। দেখলাম মানুষ জন সব গলা পর্যন্ত ডুবে রয়েছে। আমাকে বলছে, দিদি আমরা এখানে লুকিয়ে আছি। না হলে মেরে দেবে। আমি যখন কিছু বলি তার প্রমাণ থাকে। আমার সঙ্গে সেদিন ছিলেন সাংবাদিক অনিন্দ্য জানা। সুদীপ দা (বন্দ্যাপাধ্যায়) আমাদের বলেছিলেন, এত ঝুঁকি নিচ্ছেন! কিন্তু আমি বলেছিলাম মানুষ বিপদে পড়লে কী করব। সেদিন যারা সিপিএমের হার্মাদ ছিল, আজ তারাই বিজেপির হার্মাদ। ওই সাংবাদিক, এখান থেকে ফিরে একটি লেখা লিখেছিলেন। আমার আজও মনে আছে। প্রমাণ আছে।’’ এসব অনেকেরই আজ আর মনে নেই। তাই মনে করিয়ে দিলাম। এদিন তিনি সাধারণ মানুষের উদ্দেশ্যে বলেন,‘তৃণমূল দোষ করলে দু’টো থাপ্পড় মারবেন, সেই অধিকার আছে আপনাদের’’ এদিনের সভা থেকে নরেন্দ্র মোদিকে তোপ দেগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,বাঙালিরা তোমাদের পছন্দ করে না’’, ওরা বিজ্ঞাপনে প্রচুর টাকা খরচ করে।
অথচ গরীবদের দেওয়ার টাকা নেই। টাকা খরচ করে মন পাওয়া যায় না। এটা হৃদয় দিয়ে হয়। সন্দেশখালি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘মা বোনেদের দিয়ে কী লিখিয়ে নিয়েছে কেউ জানেনও না। সন্দেশখালির কলঙ্ক আজীবন মানুষ মনে রাখবে। এরা চক্রান্ত করে। দেখবেন মাঝে মধ্যেই এরা মন্দির থেকে একটা পুতুল সরিয়ে দেয়। পুতুল মানে ওদের পুতুল, আমাদের ঠাকুর দেবতা। আমরা সেসব সরাই না। আমরা সম্মান করি। সে যে দেবতাই হোক। ওরা সরাতে পারে।’’ বাংলায় কোনও জোট নেই। এখানে শুধু কংগ্রেস-সিপিএমের মহাঘোঁট আছে। দিল্লিতে আমরা ‘ইন্ডিয়া’র সঙ্গে আছি। ইসবার ‘ইন্ডিয়া’ সরকার আমরা গড়ব। কিন্তু এখানে একটা ভোটও সিপিএম-কংগ্রেসকে দেবেন না। কেন্দ্রে ‘ইন্ডিয়া’ সরকার গড়তে আমরা একাই একশো। এদিনের সভা থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশ্ন তোলেন,‘‘এ বার যদি ওরা জিতবেই তবে কেন অমিত শাহ বলবেন, শেয়ারে টাকা জমাও। পরে লাভ পাবেন।
আসলে শেয়ার সব ধসে গিয়েছিল। এখন নিজেদের টাকা দিয়ে শেয়ার ঠিক করছে। ওই শেয়ারে যারা টাকা জমাবে, তাদের সব ধসে যাবে। কেউ জমাবেন না। ’’ মমতা বললেন, ‘‘অমিত শাহ নির্বাচন চলাকালীন এ কথা বলতে যাবেন না। এটা পরিষ্কার আদর্শন আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে। শেয়ারে টাকা ঢালবেন কি ঢালবেন না, এটা সম্পূর্ণ আপনাদের ব্যাপার। আমি বুঝি না। কিন্তু মোদী এ বার আসছেন না। ’’ ‘এরা সব চাকরিখেকো। দশলক্ষ চাকরি আমি প্রস্তুত রেখেছি, সিপিএম-কংগ্রেস করতে দিচ্ছেন না।’’এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচন। বাংলা দেশ স্বাধীন করেছিল। এ বারও বাংলা দেশকে পথ দেখাবে। মোদীকে সরাতে হবে। মনে রাখবেন, এই নির্বাচনে যদি ওরা যেতে আর সংবিধান থাকবে না। ভোট হবে না। আপনাদের অধিকার থাকবে না। তাই বুঝে শুনে নিজের ভোট দেবেন।’’ এদিনের সভায় গরম উপেক্ষা করেই দেখা যায় জনজোয়ার।সভায় মহিলাদের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মত।