এই মুহূর্তে জেলা

মানুষ বিপদে পড়লেই টোটো নিয়ে হাজির হন তারকেশ্বরের তনুশ্রী।

হুগলি, ২৯ সেপ্টেম্বর:- কিছুদিন পরেই বাঙালি শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপুজো। মণ্ডপে আসবেন দেবী দুর্গা। তবে হুগলি জেলার তারকেশ্বরের দত্তপুকুর গ্রামের দুর্গা এখন তনুশ্রী। অভাবে তাড়নায় স্বামীর মতোই টোটো চালান তিনি। তবে আর পাঁচটা টোটোর মতো স্টেশন থেকে বাসস্ট্যান্ড যান না। শুধুমাত্র গ্রামের মানুষ বিপদে পড়লে হাসপাতাল ডাক্তার-খানা ও রাতে মহিলাদের আনা নেওয়ার কাজ করেন। তারকেশ্বর বিধানসভার দত্তপুর গ্রামের দত্ত পাড়ার বাসিন্দা তনুশ্রী দত্ত। ১২ বছর আগে ট্র্যাকার ড্রাইভার মৃণাল দত্তের সঙ্গে বিয়ে হয় তার। টোটো অটোর দাপটে বছর পাঁচেক আগে কর্মহারান মিনাল। মৃণালবাবুর মালিক বিক্রি করে দেন ট্রেকার। অগত্যা স্ত্রীর মাধ্যমে মাইক্রোফিন্যান্স কোম্পানি থেকে চড়া সুদে টাকা নিয়ে একটি টোটো কেনেন। তবে সেভাবে ভাড়া হতো না তার। যেটুকু রোজগার হতো মাইক্রোফিন্যান্স কোম্পানির সুদ দিতেই চলে যেত। এমন অবস্থায় সংসারের হাল ফেরাতে ভাসুরের টোটোটি কিস্তিতে কিনে নেন তনুশ্রী।

শুরু হয় নতুন পথচলা। স্বামী থেকে টোটো চালানো শিখে নেন তনুশ্রী। তবে অন্যান্য টোটো চালকদের মতো তনুশ্রী স্টেশন থেকে বাস স্ট্যান্ড বা এক গন্তব্য থেকে অন্য গন্তব্যে টোটো চালান না। গ্রামের মানুষরা ডাক্তার দেখাতে যাওয়া হাসপাতালে যাওয়া অথবা পড়াশোনা করে গ্রামের কোন মেয়ে রাতে বাইরে থেকে এলে তাদের একমাত্র ভরসা তনুশ্রী। স্থানীয় বাসিন্দা উত্তম লোহার জানান, পাশাপাশি গ্রাম চাকদহ, দত্তপুর, মোজপুর সহ চার পাঁচটি গ্রামের মানুষের বিপদের সঙ্গী তনুশ্রী।গ্রামে এম্বুলেন্স পরিষেবা না পাওয়া গেলে বিপদে পড়লে তনুশ্রীকে ফোন করলেই অসুস্থ মানুষকে পৌঁছে দেন হাসপাতাল কিংবা ডাক্তারখানায়। রাতে মেয়েরা গ্রামে ফিরতে তনুশ্রীর উপরেই ভরসা করেন। আমরা চাই এইরকম আরো মহিলার টোটো চালক তৈরি হোক গ্রামে। এ কাজ করে নিজেই উপার্জন যেমন করছেন, সাথে সাথে তনুশ্রী গ্রামের মানুষের নয়নের মনি হয়ে উঠেছেন।

এই বিষয়ে তনুশ্রী জানান, বাড়িতে তিন বোনের মধ্যে ছোট ছিলাম আমি। নিজেই পছন্দ করে বিয়ে করেছিলাম। স্বামী টোটো থেকে উপার্জনের অর্থে সংসার চালানো মুশকিল হয়ে পড়েছিল। স্বল্পসুদে টোটো নেওয়ার জন্য বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করলেও তা হয়ে ওঠেনি। বাধ্য হয়ে মাইক্রোফিন্যান্স কোম্পানি থেকে টাকা নিতে হয়। সংসারের হাল ফেরাতে বাধ্য হয়ে ভাসুরের বিক্রি করা টোটো চালাতে শুরু করি আমি। গ্রামের সকলেই আমাকে দরকার পড়লেই ডাকতে থাকেন। মহিলা ও বয়স্করা আমার প্রধান যাত্রী। রাতে স্টেশন থেকে গ্রামের কোন মেয়েকে আনতে তাদের পরিবারের লোকজন আমাকেই খবর দেন। রাতে বেশি হলে একটু ভয় লাগে, তবে বেশিরভাগ মানুষই সহযোগিতা করে। বহু মানুষের আশীর্বাদ পেয়েছি। অনেকেই প্রয়োজনে লজ্জা ভয় ত্যাগ করে নিজের পছন্দের পেশায় আসুক এটাই আমি চাই।