এই মুহূর্তে কলকাতা

বাংলাকে দরাজ সার্টিফিকেট রাষ্ট্রপতির।

কলকাতা, ১৭ আগস্ট:- ঝটিকা সফরে এসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে বাংলাকে দরাজ সার্টিফিকেট দিলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। এক তারকাখচিত অনুষ্ঠানে আজ কলকাতার গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্সে নৌসেনার নতুন স্টেলথ গাইডেড-মিসাইল ফ্রিগেটের উদ্বোধন করেন রাষ্ট্রপতি। সেখানে তিনি বাংলার শিল্প-সংস্কৃতি ও মেধা সম্পদের ভূয়সি প্রশংসা করেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, “ভারতের রাষ্ট্রপতি হিসেবে এটি পশ্চিমবঙ্গে আমার দ্বিতীয় সফর। কলকাতার প্রাণবন্ত শহর, এর সমৃদ্ধ ইতিহাস এবং সংস্কৃতির সাথে আমাদের জাতির হৃদয়ে একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। বৌদ্ধিক প্রাণবন্ততা, শৈল্পিক স্পৃহা এবং বিশ্বচেতনা দেশের মধ্যে সেরা।” এদিন বোতাম টিপে ‘আইএনএস বিন্ধ্যগিরি’ক জলে ভাসিয়ে দেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। এর আগে, স্বস্তিক চিহ্ন এঁকে, নারকেল ফাটিয়ে ও মালা পরিয়ে জাহাজের পুজো করা হয়।

তার পর তিনি জাহাজটিকে জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করেন এবং বোতাম টিপে জাহাজের নাম ফলক প্রকাশ করেন। আগাগোড়া রাষ্ট্রপতির পাশে ছিলেন মুখ্য়মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। বক্তব্য রাখতে গিয়ে দেশের জলসীমার সুরক্ষিত রাখার জন্য ভারতীয় নৌসেনার প্রশংসা করেন। সময়মতো জাহাজের নির্মাণ শেষ করার জন্য জিআরএসই কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান নৌসেনা প্রধান আর হরি কুমার। রাষ্ট্রপতি অর্থনীতির সার্বিক বিকাশ এবং জলসীমার মজবুত করতে নৌশক্তি র প্রসারের ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি বলেন আজ, ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি এবং আমরা অদূর ভবিষ্যতে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হওয়ার চেষ্টা করছি। একটি ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি মানে বাণিজ্যের উচ্চ পরিমাণ। আমাদের বাণিজ্য-পণ্যের একটি বিশাল অংশ সমুদ্রপথে পরিবহণ করে।

এই সত্যটি আমাদের বৃদ্ধি এবং সুস্থতার জন্য মহাসাগরের গুরুত্বকে তুলে ধরে। এর পাশাপাশি রাষ্ট্রপতি মুর্মু ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চল এবং বৃহত্তর ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের নিরাপত্তার বিভিন্ন দিকের কথা উল্লেখ করেন। এর জলদস্যুতা, অস্ত্র, মাদক চোরাচালান, অবৈধ মানব অভিবাসন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় ভারতীয় নৌবাহিনীর গুরুত্বের কথা তুলে ধরেন। ‘আইএনএস বিন্ধ্যগিরি’ নামের এই রণতরী ভারতীয় নৌসেনার ‘প্রজেক্ট-১৭ আলফা’ বা সংক্ষেপে ‘পি-১৭এ’ প্রকল্পের ষষ্ঠ জাহাজ। এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী অজয় ভাট, নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল আর হরি কুমার, জি আর এস ই র চেয়ারম্যান পি আর হরি সহ শীর্ষ পদাধিকারীরা। এছাড়া, উপস্থিত ছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি, মেয়র ফিরহাদ হাকিম, প্রাক্তন ভারত ক্রিকেট অধিনায়ক তথা প্রাক্তন বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় প্রমুখ।

নৌসেনার ‘পি-১৭এ’ প্রকল্পের অধীনে সাতটি নিলগিরি-শ্রেণির (এই প্রজেক্টের প্রথম জাহাজ ‘আইএনএস নিলগিরি’-র নামে শ্রেণিভুক্ত) ৭টি স্টেলথ গাইডেড-মিসাইল ফ্রিগেট তৈরি হচ্ছে। এর মধ্যে ৪টে নির্মিত হয়েছে মুম্বইয়ের মাজগাঁও ডকইয়ার্ডে। বাকি তিনটির নির্মাণ হয়েছে কলকাতায় গার্ডেনরিচ শিপবিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ার্স (জিআরএসই)-তে। ‘আইএনএস বিন্ধ্যগিরি’ হলো এই প্রকল্পের ষষ্ঠ তথা এখানে তৈরি হওয়া তৃতীয় তথা শেষ জাহাজ। সেই দিক থেকে কলকাতার জাহাজ নির্মাণকারী সংস্থা জিআরএসই-র মুকুটে যুক্ত হলো নতুন পালক। এর আগে, এখান থেকেই উদ্বোধন হয়েছে যথাক্রমে ‘আইএনএস হিমগিরি’ ও ‘আইএনএস দুনাগিরি’। এই দুটিই এখন সমুদ্র-ট্রায়ালে রয়েছে। সম্ভবত, চলতি মাসেই নৌসেনায় অন্তর্ভুক্ত হতে চলেছে ‘আইএনএস হিমগিরি’।