কলকাতা, ২২ এপ্রিল:- স্বস্তিদায়ক আবহাওয়ায় সকাল থেকেই ঈদের উৎসবে মেতে উঠেছেন রাজ্যবাসী। কলকাতার রেডরোড সহ বিভিন্ন জায়গায় সকালে ঈদের নামাজের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে উৎসবের। তারপরে চলছে পরস্পরের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের পালা। ঈদ উপলক্ষে রাজ্যের সর্বত্র আটোসাটা নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। শহরে ঈদের সবথেকে বড় জমায়ে ত হয়েছে কলকাতার রেড রোডে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি ও তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে সকলকে শুভেচ্ছা জানান। দীর্ঘ ১২ বছর পর আজ কলকাতা পার্ক সার্কাস ময়দানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর আগে নানা কারণে এ ময়দানে ঈদের জামাত হতো না। শহরের রাজপথে গাড়িঘোড়া বন্ধ করে সাধারণ মানুষ ঈদের নামাজ পড়তো। আজ নামাজের পর ময়দানে আসা স্থানীয়দের মধ্যে খুশির আমেজ দেখা গেছে। নামাজের আগে খুতবায় ইমাম বলেন, আজ আবহাওয়া ভালো। শান্তির পরিবেশে আমরা সবাই মিলে খুব ভালোভাবে ঈদ পালন করছি। বাংলায় যারা বাস করেন, এই ঈদ সবার, শুধু মুসলমানদের নয়।
আজ যেমন ঈদগাহে রাজ্যের নেতা-মন্ত্রীরা আছেন, পুলিশ প্রশাসন আছে, মিডিয়া আছে এবং সাধারণ মানুষও আছেন। সবাই কি ঈদের নামাজ পড়লেন? তা তো নয়। কিন্তু, নামাজ শেষে একে অপরের সাথে সবাই আলিঙ্গন করলেন। সে কারণেই বলছি, এই ঈদ এ বাংলার সবার উৎস। মানুষ নিজেরা নিজেদের মধ্যে সব ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। আমাদের আসল পরিচয় মনুষ্যত্ব এবং আমরা মানুষ। পার্ক সার্কাস অঞ্চলে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মন্ত্রী ও সঙ্গীত শিল্পী বাবুল সুপ্রিয়। ২০২২ সালের উপনির্বাচনে তৃণমূলের টিকিটে বিধায়ক হয়েছেন বিজেপি ত্যাগী বাবুল। আজ তিনি ঈদের শুভেচ্ছা জানাতে ময়দানে আসেন। বাবুল বলেন, আমাদের মুখ্যমন্ত্রী সব সময় চান বাংলায় শান্তি এবং সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব বজায় থাকুক। আমরাও তাই চাই। সেকুলার ইন্ডিয়ায় উৎসবে যেন কোনো ভেদাভেদ না থাকে। আমরা যেভাবে দুর্গাপূজা পালন করি, ক্রিসমাস পালন করি, একইভাবে ঈদ পালন করি। আর সেই ঈদের শুভেচ্ছা বার্তা দিতেই আমার এই ঈদগাহে আসা। আমরা যেন এভাবেই অপরের সাথে থাকতে পারি। একে অপরের জন্য দোয়া করুন, একে অপরের জন্য প্রার্থনা করি, একে অপরের ভাল চাক, এভাবেই যেন আমাদের সারা বছর কাটাতে পারি।
কলকাতা কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে ঈদের জামাতে উপস্থিত ছিলেন দেবাশীষ কুমার। তিনি বলেন, দীর্ঘ এক মাস কঠিন রোজা পালন করে আজ খুশির ঈদ। অবশ্যই মুসলমানদের প্রধান উৎসব। কিন্তু বাংলার বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য যে রীতি, সেদিক থেকে এই উৎসব আমাদেরও। আমরা নামাজ পড়তে জানি না। মুসলমান ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করি না। কিন্তু এরপরেও উৎসব ঘিরে যে খুশির আমেজ থাকে তাতে আমরাও গা ভাসিয়ে দিই। খুশির ঈদ উপলক্ষে আমি প্রত্যেক শহরবাসীকে শুকরিয়া ও শুভেচ্ছা জানাই। আজ সবচেয়ে বড় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে কলকাতা ফোর্ট উইলিয়াম সংলগ্ন সড়কে। পরের বড় আয়োজন হয় বাংলাদেশ লাইব্রেরি সংলগ্ন পার্ক সার্কাস ময়দানে। এছাড়া নাখোদা মসজিদ সংলগ্ন জাকারিয়া স্ট্রিট, এসপ্ল্যান্ড ও টালিগঞ্জে অবস্থিত টিপু সুলতান মসজিদসহ শহরের ৬৭৮টি স্থানে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সবার আড়ে ঈদের জামাত হয় নাখোদা মসজিদে সকাল সোয়া ৬টায়। সকাল সাড়ে সাতটায় টিপু সুলতান মসজিদ, সাদে আটটায় পার্ক সার্কাস ও রেড রোডে।