এই মুহূর্তে জেলা

হাওড়ায় বর্ধমানের ছায়া। চোলাই বিষ মদ খেয়ে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু। অসুস্থ অনেকে।

হওড়া, ২০ জুলাই:- হাওড়ার মালিপাঁচঘড়ার ঘুসুড়ি এলাকায় গজানন্দ বস্তিতে বিষ চোলাই মদ খেয়ে অসুস্থ হয়ে বেশ কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। সরকারিভাবে এখনও পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা ৭ জন। অসুস্থ হয়ে অনেকে হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। মদ খেয়ে অসুস্থদের ঘুসুড়ির জয়সোয়াল হাসপাতালে এবং কয়েকজনকে হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হাওড়ার ঘুসুড়ির মালিপাঁচঘড়া থানা এলাকার ওই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, মালিপাঁচঘড়া থানার পিছন দিকেই রেললাইনের ধারে নিয়মিত বসে চোলাইয়ের ঠেক। মঙ্গলবার রাতেও সেখানে মদের আসর বসেছিল। সেখানেই চোলাই জাতীয় বিষ মদ খেয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ভোররাতে কয়েকজনের মৃত্যু হয়। অসুস্থদের ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। মৃতদেহগুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেগুলি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ, প্রতাপ কর্মকার নামের এক ব্যক্তি ওই চোলাইয়ের ঠেক চালাতেন। তাঁকে পুলিশ আটক করেছে। চোলাইয়ের ঠেক সিল করে দেওয়া হয়েছে। বুধবার সকাল থেকে এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। চোলাইয়ের ঠেকে ভাঙচুর করে ক্ষিপ্ত জনতা। এখনও এলাকায় উত্তেজনা রয়েছে। এদিকে, এই ঘটনায় স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরেই নিয়মিত চলছিল ওই চোলাই মদের কারবার।

সব জেনেও কেন আগেভাগেই ওই চোলাই ঠেক ভেঙে দিল না প্রশাসন সে নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার বাসিন্দারা।প্রসঙ্গত, হাওড়ার মালিপাঁচঘড়ায় বিষ মদ-কান্ডে এখনও পর্যন্ত সরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা ৭ জন বলে জানা গেছে। এদের মধ্যে ৫ জনের পরিচয় জানা গেছে। বাকি দুই মৃতের নাম এখনো জানা যায়নি। বুধবার দুপুর পর্যন্ত শেষ পাওয়া খবরে জানা গেছে, হাওড়া জেলা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৩ জন। এদের মধ্যে লক্ষ্মণ সাউ এবং কালু প্রসাদ নামের দুই ব্যক্তি হাসপাতালে ভেন্টিলেশনে রয়েছেন। গঙ্গা সাউ নামের আরেক অসুস্থ হাসপাতালের জেনারেল বেডে চিকিৎসাধীন বলে জানা গেছে। এছাড়াও ঘুসুড়ির জয়সোয়াল হাসপাতালে অনেকের চিকিৎসা চলছে। এদিন ঘটনাস্থলে ছুটে যান হাওড়ার নগরপাল প্রভীন ত্রিপাঠী। উপস্থিত ছিলেন পুলিশের পদস্থ কর্তারাও। হাওড়া জেলা হাসপাতালে আবগারি দপ্তরের আধিকারিকরাও এদিন উপস্থিত হন। এদিকে, মদ-কান্ডে মৃতের ভাই অশোক রায় জানান, এলাকায় মদ বিক্রি করে প্রতাপ কর্মকার নামে একজন। মালিপাঁচঘড়ার ধর্মতলা গজানন বস্তিতে ওই ঘটনা ঘটেছে। অনেকের মৃত্যু হয়েছে। তাঁর দাদা দু’দিন আগে মদ খেয়েছিল। রাত ১২টার সময় তাঁর মৃত্যু হয়। সকাল থেকে দাদা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। শঙ্কর সাউ নামের আরেক এলাকাবাসী জানান, মঙ্গলবার এরা এখানকার দোকান থেকে মদ খেয়েছিল।

রাত থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন অনেকে। এদের মধ্যে ১০ জন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তারমধ্যে ৭ জন মারা গিয়েছেন। মদ খেয়েই এমন ঘটনা ঘটেছে। পাড়ার মধ্যে ১০ থেকে ১৫ জন অসুস্থ হয়েছেন। এরমধ্যে আশঙ্কাজনকভাবে অনেকেই ভর্তি আছেন। এই ঘটনা সম্পর্কে আরেক বাসিন্দা জানান, ঘটনা ঘটেছে বিষাক্ত মদ খেয়েই। এখনও পর্যন্ত ২০-২৫ জন রোগী এসেছে। এর মধ্যে কয়েকজনের মৃত্যু হয়েছে। একই এলাকার যারা মদ খেয়েছিল তাঁদেরই এমন হয়েছে। এরা ধর্মতলা ফাঁড়ির দোকান থেকেই মদ কিনত। এটা কোনও সরকারি দোকান নয়। বেআইনিভাবে মদ বিক্রি হতো। এদিকে, হাওড়ার এই ঘটনা সম্পর্কে রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী অরূপ রায় জানান, এইরকম ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক। মানুষের মৃত্যু কখনই কাম্য নয়। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। রাজ্য সরকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি পুলিশ দেখছে। মৃতের সংখ্যা এখনও সব না জানতে পারলেও মদের বিষক্রিয়ায় বেশ কয়েকজন মারা গিয়েছেন। কি কারণে এমন ঘটনা ঘটল এই ব্যাপারে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। কি কারণে মৃত্যু হয়েছে তা খতিয়ে দেখে পুলিশ ব্যবস্থা নেবে। সরকারিভাবে রিপোর্ট জানার পর সরকার সহানুভুতির সঙ্গে বিষয়টি দেখবে।এদিকে, পুলিশের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রসঙ্গে মন্ত্রী জানান, মমতা বন্দ্যোপাধ্যেয়ের আমলে পুলিশ অন্যায় করলে তাঁদের ছাড়া হবে না। পশ্চিমবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় কোথায় কি ঘটছে তা সব পুলিশের দেখা সম্ভব নয়। তবে পুলিশের যদি কোনও গাফিলতি থাকে তাহলে সরকার পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।