সুদীপ দাস, ২ জুন:- ভাষাটাই ছিল প্রধান সমস্যা বিশেষ করে বাংলার মানুষের কাছে। কিন্তু মিষ্টি হাসি হাম সফরে সকলের মনকে জয় করেছিল ওই মা।যাত্রা পথে কোন এক যুবক ভালোবেসে ফেলেছিল মিষ্টি হাসি ওই মাকে। ছেলেটি জানতো মায়ের ভাষা তাই গল্পের মাধ্যমে জেনেছিল মায়ের জীবন কাহিনী। তাই বুদ্ধি করে একটি কাগজে মায়ের জীবন বুঝতে পারে সবাই তাই ইংরেজি ও বাংলায় লিখে দিয়েছিল ওই মায়ের জীবন বৃত্তান্ত। কর্নাটকের বেলগাঁও এলাকায় বাড়ি ছিল শিবালিঙ্গাভভা বাসাপ্পা নাভি নামে 70 বছরের এক মহিলার। ব্যবসায়ী পুত্রের কাছেই থাকতো সে কিন্তু পুত্রের কাছে বর্তমানে মা হয়ে উঠেছিল বোঝা। তাই মাস দুই আগে মাকে তুলে দিয়েছিল ট্রেনে। বলেছিল এবার বিশ্বভ্রমণ করে আয়। কিন্তু মা বিশ্ব ভ্রমণ করতে গিয়ে বুঝতে পেরেছিল তার ভাষা কেউই বুঝতে পারছে না। এই ট্রেন সেই ট্রেন করতে করতে দিল্লি থেকে ট্রেন ধরেছিল বাংলার। ওই যাত্রাপথেই পরিচয় হয় এক যুবক যাত্রীর সাথে। মায়ের মিষ্টি হাসি তার মন ভরিয়ে ছিল তবে ওই যুবক জানতো মায়ের ভাষা। মায়ের মর্মান্তিক কাহিনী তাকে বেদনা দিয়েছিল।
কিন্তু তার কিছু করার ছিলনা তাই ছেলেটি একটি কাগজে ইংরেজি ও হিন্দী দুই ভাষাতেই মায়ের জীবনের কথা লিখে কাগজটি দিয়ে নেমে গিয়েছিল ট্রেন থেকে। বৃদ্ধা মা হাওড়া স্টেশনে নেমে লোকাল ট্রেন ধরে চলে আসে ভদ্রেশ্বর স্টেশনে। কয়েকদিন স্টেশনে কাটিয়েছিল কিন্তু ভাষাগত সমস্যা থাকায় সে কাউকে বোঝাতে পারিনি। ভদ্রেশ্বর এর কোন এক যাত্রী শেওড়াফুলি জি আর পি কে ফোন করে ঐ বৃদ্ধার কথা জানিয়েছিল। এরপর জিআরপি তাঁকে উদ্ধার করে নিয়ে যায় শেওড়াফুলি জিআরপিতে। ভাষা বুঝতে না পারলেও ওই মায়ের মিষ্টি হাসি মন ভরিয়ে দিয়েছিল জিআরপি পুলিশ কর্মীদেরকে। কিন্তু কিছুই করার ছিল না ভালোবেসে প্ল্যাটফর্ম এর একপাশে থাকার ব্যাবস্থা করে দিয়েছিল। চেষ্টা করছিল কোন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের মাধ্যমে যদি ফিরিয়ে দেয়া যায় ওই মাকে তার বাড়িতে। শেওড়াফুলি জিআরপির সাব ইন্সপেক্টর রবীন্দ্রনাথ প্রামানিক যোগাযোগ করেন চুঁচুড়া স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন আরোগ্যের কাছে। গতকাল রাত্রে আরোগ্যের স্বেচ্ছাসেবী টিম পৌঁছে যায় শেওড়াফুলি স্টেশনে।
সঙ্গে ছিলেন আরোগ্যর স্বচ্ছাসেবক তথা দক্ষিন ভারতীয় একাধিক ভাষা জানা লক্ষ্মী হরিজন। লক্ষ্মীদেবীই দোভাষীর কাজ করেন। লক্ষ্মীদেবী ওই মহিলার সাথে কথা বলে ওনার জীবনকাহিনী সকলের সামনে বাংলায় তুলে ধরেন। বুধবার গভীর রাত পৌনে দুটো নাগাদ শেওড়াফুলি থেকে মহিলাকে নিয়ে আসা হয় চুঁচুড়াতে। এখন চেষ্টা চলছে ওই মাকে তার কর্নাটকের বাড়িতে ফিরিয়ে দেওয়ার। আরোগ্যর পৃষ্ঠপোষক ইন্দ্রজিৎ দত্ত বলেন পথহারা বহু মানুষকে আমরা ঘরে ফিরিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এই কাজটা সম্পূর্ণ অন্যরকম। এই মাকে বাড়িতে পৌঁছে দিতে পারলে একটা আলাদা তৃপ্তি লাভ হবে। পাশাপাশি তিনি বলেন একজন সন্তানের কাছে বাবা-মায়েরাও বোঝা হয়ে ওঠে। সত্যি এটা সামাজিক অবক্ষয়। এই অবক্ষয় দূরীকরনে সরকারেরও এগিয়ে আসা উচিত। মিষ্টি হাসি হয়তো অনেক কিছুই ভুলিয়ে দেয় কিন্তু ছেলের কাছে সেই হাসিও বিষ হয়ে গিয়েছিল তাই তো নির্মম হতে পেরেছিল গর্ভধারিণীর মায়ের প্রতি।