কলকাতা , ৯ নভেম্বর:- কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী ডাঃ হর্ষবর্ধন আজ ৯ টি রাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রী, প্রধান সচিব ও অতিরিক্ত মুখ্য সচিবদের সঙ্গে পর্যালোচনা বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে অন্ধ্রপ্রদেশ, আসাম,পশ্চিমবঙ্গ, রাজস্থান, হিমাচলপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং কেরালা যোগ দেয়। কেরালার স্বাস্থ্য মন্ত্রী শ্রীমতি কে কে শৈলজা, আসামের স্বাস্থ্যমন্ত্রী শ্রী পীযূষ হাজারিকা, পাঞ্জাবের স্বাস্থ্যমন্ত্রী শ্রী বলবীর সিং সিন্ধু, তেলেঙ্গানার স্বাস্থ্যমন্ত্রী শ্রী এতালা রাজেন্দর, হিমাচলপ্রদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী শ্রী রাজীব শৈজাল এই বৈঠকে যোগ দেন। বেশ কয়েকটি রাজ্য, জেলায় ৭ দিনে গড় হিসেব করলে দেখা যাবে দৈনিক সংক্রমণ ক্রমশই বেড়ে চলেছে। অন্যদিকে পরীক্ষার সংখ্যা ক্রমশই কমেছে এবং মৃত্যুহার বেড়ে চলেছে। দুর্বল জনগোষ্ঠীর মধ্যে মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে, সংক্রমণের হার দ্বিগুণ হয়েছে এবং হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা ক্রমশই বেড়েছে।
ডাঃ হর্ষবর্ধন সকলকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে জানান, মহামারী সংক্রমণের ১১ মাসে পা দিতে চলেছে দেশ। গত ৮ই জানুয়ারি কোভিড-১৯ বিষয়ে প্রথম বৈঠক বসে বলেও তিনি জানান। শীতের মরশুম এবং দীর্ঘ উৎসবের সময় এখনও পর্যন্ত যৌথ প্রয়াসে উপলব্ধ লাভকে ক্ষতি করতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের সকলকে দশেরার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হওয়া পুরো উৎসবের মরশুমে সজাগ থাকতে হবে এবং সামনে দিওয়ালি, ছট পুজো, বড়দিন ও তার পরের বছর মকর সংক্রান্তি পর্যন্ত সর্তক থাকতে হবে। শীতের মাসে শ্বাসযন্ত্রে ভাইরাস দ্রুত ছড়িয়ে পরতে পারে।’
কোভিডের মধ্যে দিয়ে দেশবাসীর যাত্রাপথের অভিজ্ঞতার কথা ভাগ করে নিতে গিয়ে তিনি বলেন, জানুয়ারির গোড়ায় দেশে পুনেতে যেখানে একটিমাত্র এনআইভি পরীক্ষাগার ছিল সেখানে আজ পরীক্ষাগারের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৭৪ টি হয়েছে। এমনকি প্রতিদিন ১০ লক্ষ ৫০ হাজার নমুনা পরীক্ষাও করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কোভিড সুরক্ষা ব্যবস্থাপনায় প্রতিটি স্তরে সাধারণ বেড, অক্সিজেন যুক্ত বেড এবং আইসিইউ বেডের সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সকলের জ্ঞাতার্থে তিনি জানান, মোট সংক্রমিত রোগীর মধ্যে মাত্র ০.৪৪ শতাংশ রোগীর ভেন্টিলেটর সাহায্যের প্রয়োজন হয়ে থাকে। এমনকি মোট সক্রিয় রোগীর মধ্যে ২.৪৭ শতাংশ রোগীর আইসিইউ বেড এবং মাত্র ৪.১৩ শতাংশ রোগীর অক্সিজেন যুক্ত বেডের প্রয়োজন হয়। তিনি জানান, বিশ্বের মধ্যে ভারতে আরোগ্যের হার সবথেকে বেশি এবং মৃত্যুর হার সবথেকে কম।
সম্প্রতি উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট, দিল্লী, তামিলনাড়ু, কর্ণাটক এবং ছত্তিশগড় রাজ্যের শীর্ষ স্বাস্থ্য আধিকারিক ও সংশ্লিষ্ট রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলাপচারিতা বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি সকলকে আশ্বস্ত করেন যে এই রোগের গতি প্রকৃতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে পর্যবেক্ষণ চালাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে কোভিডের বিষয় নিয়ে জাতির উদ্দেশে একাধিকবার ভাষণ দিয়েছেন বলেও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জানান। প্রধানমন্ত্রী সমস্ত মুখ্যমন্ত্রী এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রধানদের সঙ্গে এই রোগের তীব্রতা বিষয়ে আলোচনা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর জাতির উদ্দেশে সর্বশেষ ১০ মিনিটের ভাষণে কোভিড নিয়ন্ত্রণে উপযুক্ত আচরণ মেনে চলার জন্য শুধু বার্তা দেননি, তিনি এটিকে এক জন আন্দোলনে রূপান্তরিত করার আহ্বান জানিয়েছেন। জন আন্দোলন বিষয়ে উৎসাহদানে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলি নিয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফোনের কলার টিউন এবং আইইসি কার্যক্রমের মাধ্যমে এর বার্তা প্রচারের কথা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবথেকে ভালো এবং সহজ উপায় হল কোভিডের বিষয়ে সঠিক নিয়ম মেনে চলা ও আচরণ অনুসরণ করা।
ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের অধিকর্তা ডাঃ সুজিৎকে সিং সকলকে কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলিকে অবহিত করেন। যেসব অঞ্চল ও জেলাগুলিতে উদ্বেগ অব্যাহত হয়েছে তাও তুলে ধরেন তিনি। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী কোভিড সংক্রমিত রোগীর ক্ষেত্রে নজরদারি, চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা এবং নিয়ন্ত্রণ বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপের ক্ষেত্রে বিভিন্ন তথ্য ভাগ করে নেন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব শ্রী রাজেশ ভূষণ সমস্ত রাজ্যকে কোভিড নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ জোর দিতে বলেন। পাশাপাশি পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধি, বাজার এলাকা, কর্মসংস্থান, ধর্মীয় জমায়েতের মতো স্থানে,যে জায়গায় সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পরার সম্ভাবনা রয়েছে সেখানে বেশি করে পরীক্ষা চালানোর জন্য আহ্বান জানান তিনি। একইসঙ্গে আরটি-পিসিআর পরীক্ষার সংখ্যা বৃদ্ধি করার কথাও তুলে ধরেন তিনি। এদিনের পর্যালোচনা বৈঠকে অতিরিক্ত স্বাস্থ্য সচিব শ্রী আরতি আহুজা, যুগ্ম স্বাস্থ্য সচিব শ্রী লভ আগরওয়াল এবং মন্ত্রকের একাধিক শীর্ষ আধিকারিক উপস্থিত ছিলেন।