এই মুহূর্তে জেলা

ভিনদেশের অতিথিরা আকাশ পথ পাড়ি দিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে হাজির হতে শুরু করেছে।


হাওড়া,৬ ডিসেম্বর:- ভিনদেশের অতিথিরা দীর্ঘ আকাশ পথ পাড়ি দিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে হাজির হতে শুরু করেছে। তাই বাংলার খাল, বিল, জলাশয় এখন তাদের কলকাকলিতে মুখর। পুরো শীতকাল এই রাজ্যে কাটিয়ে শীতের অতিথিরা আবার দীর্ঘ আকাশ পথ পাড়ি দিয়ে সপরিবারে ফিরে যাবে নিজেদের দেশে। এটাই তাদের জীবনচক্রের এক চিরাচরিত রীতি। এরা হল পরিযায়ী পাখির দল। বিভিন্ন শীতপ্রধান দেশ থেকে শীতের সময় এরা গ্রীষ্মপ্রধান দেশগুলির উদ্দেশে ডানা মেলে। তারপর তারা তাদের বসবাসের উপযুক্ত জলাশয়ে শীতের অতিথি হয়ে সংসার পেতে বসে । শীত ফুরোলেই স্বদেশমুখী হয় এই অতিথিরা । পক্ষী বিশারদরা জানিয়েছেন পরিযায়ী পাখির দল সাধারণত তিন দফায় এরাজ্যে প্রবেশ করে । চলতি বছরেও বর্ষার কিছু পর থেকেই পরিযায়ী পাখিদের প্রথম পর্যায়ের সদস্যরা এরাজ্যে পাড়ি জমিয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ের সদস্যরাও তাদের শীতকালীন ভ্রমণ পর্ব শুরু করে দিয়েছে । হাওড়া জেলার বিভিন্ন গ্রামের জলাশয়কে কেন্দ্র করে সেই সব পাখিদের পরিবারে এখন চূড়ান্ত ব্যস্ততা। বিশিষ্ট পক্ষীবিশারদ ড. সৌরভ দোয়ারী ও অম্বর চক্রবর্তী জানান প্রায় বর্ষার সময় থেকেই পশ্চিমবঙ্গের সমভূমি এলাকায় শীতকালীন পরিযায়ী পাখিরা পাড়ি জমাতে শুরু করে। সাধারণত প্রথম দিকে আসে ছোট পাখির দল আর শেষ দিকে আসে হাঁস জাতীয় বড় পরিযায়ীরা । গত কয়েক বছর যাবৎ গ্রামীণ হাওড়া এলাকায় বেশ ভাল সংখ্যায় ছোট পরিযায়ীদের ভিড় জমাতে দেখা গিয়েছে। আর বরাবরই হাঁস জাতীয় বড় পরিযায়ীদের পছন্দ সাঁতরাগাছির মতো শহর এলাকার জলাভূমি। কিন্তু শেষ দু’বছর ধরে বিভিন্ন কারণে সাঁতরাগাছিতে পরিযায়ীদের আসার সংখ্যা উদ্বেগজনক ভাবে হ্রাস পেয়েছে। সে ক্ষেত্রে গ্রামীণ হাওড়াতে ছোট পরিযায়ীদের আসা অব্যাহত রয়েছে।

There is no slider selected or the slider was deleted.

                                                                                                                                                                     এবছরও প্রচুর সংখ্যায় ছোট পাখির দল ভিড় জমিয়েছে হাওড়ার গ্রামাঞ্চলের বেশ কিছু জলাশয়ে। পক্ষী বিশারদরা জানান এবছর প্রথম দিকে আসে বার্ন সোয়ালো বা আবাবিল প্রজাতির পাখি। বর্ষার পর থেকেই আমতা, বাগনান, উদয়নারায়ণপুর, শ্যামপুরের জলাশয় গুলির আশপাশে তাদের উড়তে দেখা গিয়েছে। প্রতিবছর এরা হিমালয়ান অঞ্চল থেকে হাওড়ার গ্রামীণ এলাকায় পাড়ি জমায়। এরপর সেপ্টেম্বর মাস নাগাদ যে পরিযায়ীটি উদয়নারায়ণপুরে নজরে আসে সেটি হল ব্রাউন স্রাইক বা খড়কচুয়া। মধ্য এশিয়া, সাইবেরিয়া এবং মধ্য চিন থেকে এদের আগমন ঘটে। সৌরভবাবু জানান তিনি ও অম্বরবাবু গ্রামীণ হাওড়ার ৬০ টিরও বেশী জায়গায় এদের দেখা পেয়েছেন। তারপর সেপ্টেম্বর মাসেই তাঁরা প্রথম হোয়াইট ওয়াগটেল অর্থাৎ সাদা খঞ্জনার দর্শন পান । এই মুহূর্তে অবশ্য প্রায় সর্বত্রই সাদা, ধূসর, হলুদ ও হলদে মাথা খঞ্জনাদের ঘুরতে দেখা যাচ্ছে বলে তিনি জানান। তিনি আরও বলেন এই খঞ্জনারা আসে মূলতঃ কাশ্মীর, উচ্চ হিমালয়ান ও দক্ষিণ তিব্বতীয় অঞ্চল থেকে। এদের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বিভিন্ন ধরনের স্যান্ডপাইপার বা বালুবাটানরা হাওড়ার গ্রামাঞ্চলে প্রবেশ করেছে। সৌরভবাবু জানিয়েছেন এখনও পর্যন্ত তিন ধরনের বালুবাটান দেখা গিয়েছে। তারা হল ছোট, সবুজ বালুবাটান ও উড বালুবাটান। এর মধ্যে উড বালুবাটান ও সবুজ বালুবাটানরা তুর্কমেনিস্তান ও রাশিয়ার পথ ধরে সুদূর উত্তর এশিয়া ও ইউরোপ থেকে এখানে আসে। তবে এবারে সবচেয়ে বেশি এসেছে গ্রে হেডেড ল্যাপউইং অর্থাৎ ধূসর মাথা হট্টিটি। এরা এসেছে উত্তর পূর্ব চীন, কোরিয়া ও জাপান থেকে। আর এবারে গ্রামীণ হাওড়ার সৌন্দর্য সবথেকে বেশি বৃদ্ধি করেছে প্যাসিফিক গোল্ডেন প্লভার বা সোনাবাটান। এরা প্রশান্ত মহাসাগর উজিয়ে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে দীর্ঘ আকাশ পথ পাড়ি দিয়ে আসে। হাওড়ার গ্রামীণ এলাকায় এইসব প্রজাতির পরিযায়ীদের ভিড় দেখে অনুমান করা যায় যে এখনও গ্রামীণ হাওড়ার পরিবেশ এদের জন্য উপযুক্ত।

There is no slider selected or the slider was deleted.

                                                                                                                                                                                                    সম্প্রতি হাওড়ার গ্রামীণ এলাকার কিছু অঞ্চলে অত্যন্ত ছোট আকারের পরিযায়ী তাইগা চুটকির দেখা মেলায় পক্ষী বিশারদরা যথেষ্ট উৎসাহিত হয়েছেন। তাঁরা জানান এই ধরনের পরিযায়ীরা আসে সাইবেরিয়া ও মঙ্গোলিয়া থেকে। অম্বরবাবু বলেন গ্রামীণ হাওড়ার পরিবেশ পরিযায়ীদের বসবাসের উপযুক্ত রাখতে হলে প্রতিটি জলাশয়কে দূষণমুক্ত রাখতে হবে। তিনি স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্দেশ্যে জলাশয়গুলিকে দূষণমুক্ত রাখার বার্তা দিয়ে বলেন জলাশয় দূষিত হয়ে পড়লে সাঁতরাগাছি ঝিলের মতো গ্রামীণ হাওড়া এলাকাতেও পরিযায়ীদের আনাগোনা বন্ধ হয়ে এলাকা পক্ষী শূন্য হয়ে পড়বে এবং শ্রীহীন হয়ে পড়বে গ্রামীণ হাওড়া।

There is no slider selected or the slider was deleted.